মানসিক স্বাস্থ্য

মানবিক জরুরি অবস্থায় একজন মানুষকে যে ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে বসবাস করতে হয়, কারো কারো পক্ষে সেই চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন; যেমন: বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ, ভীতিজনক ঘটনাপরবর্তী মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট সমস্যায় (যা পিটিএসডি নামে পরিচিত), এমনকি সাইকোসিস বা হ্যালুসিনেশন এর মতো কঠিন মানসিক ব্যধিতে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে এই ধরনের অবস্থা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ জরুরি অবস্থার প্রাক ও পরবর্তী সময়ে পদ্ধতিগতভাবে তাদেরকে বর্জন করার প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। এছাড়াও মানবিক জরুরি পরিস্থিতিগুলোতে ঘটনার চাপ ও সহায়তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া বা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে  পূর্ব থেকে বিদ্যমান মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থা এবং মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধিতাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। যে কারণে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে ঘিরে থাকা সাংস্কৃতিক ও প্রাসঙ্গিক বিশ্বাসগুলো সম্পর্কে মনোযোগী ও সচেতন হওয়ার দরকার রয়েছে। এবং যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানীয়, আদিবাসী ও ঐতিহ্যবাহী (প্রচলিত) স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে সহযোগিতার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার সকল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে প্রতিবন্ধী এবং মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ, এমনটা করার জন্য নিচের কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহায়তা করতে পারে:

  • অন্যান্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা এবং রেফারেল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা। এবং এ লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং/অথবা মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধিতার জন্য কী ধরনের সেবা সহজলভ্য তা নির্ধারণ করা যাতে করে তাদের অন্তর্ভুক্তি, সহযোগিতা ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করা যায়।
  • যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এলাকার সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা প্রস্তুত করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত সাধারণত যে ঐতিহ্যবাসী/ অনানুষ্ঠানিক স্থানগুলোতে চিকিত্‌সা নেয় কিংবা বসবাস করে তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করুন, এবং এটা নিশ্চিত করুন যে কেউ পিছিয়ে থাকবে না কিংবা ছেড়ে যেতে না পারে।
  • কমিউনিটিভিত্তিক যত্ন এবং উপযুক্ত বিকল্প জীবনযাপনের ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিবারের সাথে থাকতে দেওয়া।
  • মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখবেন যে কখনো কখনো মানুষ শুধুই তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতে চায় এবং চায় যে তাদের কথা কেউ শুনুক। এই কথা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। অতএব এটা নিশ্চিত করুন যে বিভিন্ন যোগাযোগ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনার দলের সদস্যদের কাছে যোগাযোগ করার উপযুক্ত টুলস বা উপকরণ রয়েছে।
  • সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ করে নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীদের সাথে যোগাযোগ ও প্রবেশগম্যতা তৈরি করাসহ সকল ধরনের সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
  • যথাযথ সাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় নিরাময় ব্যবস্থার চর্চাগুলো অনুশীলন করা, তবে এটা নিশ্চিত করা যে এই ধরনের অনুশীলন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোন ক্ষতি করবে না কিংবা বৈষম্য তৈরি করবে না।
  • কমিউনিটির আত্মনির্ভরশীলতা ও সহায়তা করার বিষয়টিকে ফ্যাসিলিটেট করা ও তুলে ধরা, এবং এটা নিশ্চিত করা যে এ লক্ষ্যে সেখানে নিরাপদ ও প্রবেশগম্য জায়গা রয়েছে।
Sources
World Health Organization. Mental Health and Psychosocial Support in Emergencies.
MHPSS.net. Emergency Toolkit.
ASC. Mental Health and Psychosocial Support in Humanitarian Emergencies: What Should Humanitarian Health Actors Know? Geneva 2010.
IASC. Guidelines on Mental Health and Psychosocial support in Emergency settings. Geneva. 2007.
Top of page