যোগাযোগ

মাটিতে বসা একজন নারী কর্মী ফ্লিপচার্টের ছবি দেখিয়ে তারই মতো মাটিতে বসা একদল নারীকে তথ্য দিচ্ছেন এবং ক্রাচ ব্যবহারকারী একজন পুরুষ কাছেই একটি চেয়ারে বসে তাদের সাথে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। নারীদের কোলে তাদের সন্তানেরা রয়েছে।
© CBM/CDD

যোগাযোগের উপায়গুলো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর/এলাকার জন্য উপযুক্ত হতে হবে। প্রয়োজনে অভিযোজিত করতে হবে; যাতে করে একটি এলাকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীসহ ওই এলাকার সবাই যোগাযোগের বার্তা পেতে পারে, বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে।

প্রচারাভিযান পরিচালনাকালে সবসময় মনে রাখতে হবে, প্রতিবন্ধিতা নিয়ে যা কিছুই প্রচার করা হোক না কেন সেগুলো যেন ইতিবাচক ভাষায় বলা হয়। প্রতিবন্ধিতা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান, সভাতে বার্তা দেয়া, বিজ্ঞাপন তৈরি করা কিংবা প্রচারমূলক উপকরণে অবশ্যই সবসময় প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে ইতিবাচক ভাষা ব্যবহার করতে হবে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক যোগাযোগের জন্য টিপস:

কোন ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে কর্মসূচির আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকে; সেই অনুযায়ী নিচের ব্যবস্থাগুলো থেকে এক বা একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • ইশারা ভাষায় ভাষান্তর করা কিংবা কাগজ ও কলম ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করা;
  • যখন মানসিকভাবে পীড়িত কিংবা দুঃখে কষ্টে থাকা কারো সাথে যোগাযোগ করতে হবে তখন অবশ্যই শারীরিক ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং যোগাযোগ হতে হবে সুস্পষ্ট কিন্তু মৃদুভাবে বা নরমসুরে কথা বলতে হবে। গলার স্বর যেন নরম হয় এবং শুনে যেন হুমকিস্বরূপ মনে না হয় এবং কোনমতেই উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না এবং যাকে/বা যাদেরকে সহায়তা করা হচ্ছে তাদের কথা খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে; কারণ মানসিকভাবে পীড়িত ব্যক্তির কোন ধরনের ভয়ভীতির অভিজ্ঞতা থাকতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ধরনের লক্ষণ তার মধ্যে দেখা যেতে পারে;
  • যাদের পড়তে অসুবিধা আছে কিংবা যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এমন ব্যক্তিদের জন্য লিখিত উপকরণগুলো/বার্তাগুলো পড়ে শোনাতে হবে;
  • তথ্য বা বার্তার পরিপূরক হাতে আকাঁ কিংবা তোলা ছবি ব্যবহার করতে হবে

অন্তর্ভুক্তিমূলক সভা, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা এবং প্রশ্নাবলী:

  • অনুষ্ঠানস্থলে (যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সভা ও ফোকাস গ্রুপ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে) যাতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের — নারী ও পুরুষ — প্রতিনিধিত্ব যেন থাকে এবং তারা যেন সেখানে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে;
  • তথ্য দেয়ার জন্য আয়োজিত সভাগুলোতে তথ্য দেওয়ার জন্য যোগাযোগের বিভিন্ন ধরনের উপায়গুলো ব্যবহার করতে হবে যাতে করে উপস্থিত সকলে বার্তাগুলো পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারে; যেমন মুখে বার্তা বলা ছাড়াও ছবি একে, ক্যামেরাতে তোলা ছবি দেখিয়ে, হাতের ইশারায়, এমনকি ভূমিকা অভিনয় করে বা নাটকের মাধ্যমে বার্তাগুলো পরিপূর্ণভাবে সকলের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে;
  • যে তথ্যগুলো সভাতে দেয়া হবে সেই তথ্যগুলো আগেভাগে নমুনা ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে প্রি-টেস্ট বা ভাগ করে নিশ্চিত হতে হবে যে তারা বুঝতে পারছে। এ সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত তথ্য অংশে দেখুন।

দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে হবে:

  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বাড়ি ছেড়ে কোথাও যান না বা যেতে পারেন না তাদের বাড়ি পরিদর্শন করে তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে হবে। এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানের কাজটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীরা করবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন (ডিপিও) কিংবা ওই এলাকার কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থার সাথে সমন্বয় করে বাড়িতে থাকা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছানো যেতে পারে;
  • তথ্য দেওয়ার জন্য যদি মেগাফোন কিংবা লাউডস্পিকার ব্যবহার করেন, তবে সবাই যাতে শুনতে পায় ও প্রচারিত বার্তা বুঝতে পারে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পুরো বার্তাকে ছোট ছোট বাক্যে ভাগ করে সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে। যেমন: ঝড় আসছে! সবাইকে বাড়ি ছেড়ে সাইক্লোন সেন্টারে যেতে হবে। এখনই। সবাই বাড়ি ছেড়ে বড় রাস্তায় আসুন। এখনই। বড় রাস্তা থেকে সবাইকে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে"।
  • বাড়ি পরিদর্শনকালে এবং তথ্য প্রদানের জন্য সভা করার সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ নেওয়া যেতে পারে। এই সময়ে তাদের কাছে ত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা কী ধরনের বাধার মুখোমুখি হয় এবং এই অবস্থার উন্নতির জন্য কী কী করা যেতে পারে বলে তারা মনে করে, সেকথা তাদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া যায়। প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থাগুলো কিংবা প্রতিবন্ধী ফোকাল পয়েন্টগুলোর একটি তালিকা সঙ্গে রাখুন এবং এই তালিকার তথ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে জানান;
  • প্রতিবন্ধী ফোকাল পয়েন্ট, যা তথ্য প্রদান, সভা করা এবং রেফারেল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে, অস্থায়ী ত্রাণ শিবির, ক্যাম্প কিংবা জনসাধারণকে একত্রিত করার স্থানগুলোতে স্থাপন করা যেতে পারে। তবে এমন ধরনের ফোকাল পয়েন্ট প্রতিষ্ঠা করা হলে সেখানে অবশ্যই উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী নিযুক্ত করতে হবে। ফোকাল পয়েন্ট মানুষের সাথে প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগসূত্র তৈরির কাজ করবে, যেমন সহায়ক উপকরণ, পুনর্বাসন বা মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা (মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট (এমএইচপিএসএস)। এছাড়াও ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য গ্রুপের মানুষদের সহায়তা করতেও কাজ করবে যেমন প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য (বার্ধক্য ও প্রতিবন্ধী ফোকাল পয়েন্ট)।
Top of page