নিরূপণ করা

**কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য**

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পক্ষে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার সম্ভবনা কম। তারা ঠিকঠাকভাবে জানতেও পারেন না কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কী করা হচ্ছে এবং পুনরুদ্ধার কর্মসূচিই বা কী। এর কারণ হলো কোভিড-১৯ মোকাবেলা ও পুনরুদ্ধার কর্মসূচিতে যুক্ত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অনেকেরই অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি কীভাবে পরিচালনা করতে হবে জানা নেই। আর সে কারণেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদাগুলো জানা ও কী ধরনের কার্যকলাপ পরিচালনা করা যায় জানার জন্য চাহিদা যাচাই বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

********

মানবিক কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধী-অন্তর্ভুক্তিমূলক জরুরি সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত করা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য কমিউনিটি নিয়ে সভা করার শুরু থেকেই আলোচনা প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তাদরে পরিবার ও সহায়তাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে সকল ধরনের কার্যক্রমের পরিকল্পনা করতে হবে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক দ্রুত চাহিদা নিরূপণ হলো তথ্য সংগ্রহের একটি ব্যবস্থা যা দুর্যোগ কিংবা জরুরি পরিস্থিতি সংঘটনের পরপরই করতে হয়। লক্ষ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির চাহিদা বুঝতে পারা এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের চাহিদা যুক্তি দিয়ে সমর্থন করা।

১.     প্রতিবন্ধিতা, বয়স ও জেন্ডার বিষয়ে মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সংবেদনশীল করা।

২.     একদম গোড়া থেকে নতুন করে সব কিছু করা থেকে বিরত থাকুন: পূর্ববর্তী দুর্যোগ কিংবা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এমন প্রশাসনিক তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করুন। দেখুন সেখানে প্রতিবন্ধিতা, বয়স ও জেন্ডার সংক্রান্ত কী ধরনের তথ্য-উপাত্ত আছে এবং তাদের চাহিদা নিয়ে কী বলা হয়েছিল। এই ধরনের তথ্য-উপাত্তগুলো যাচাই বাছাই করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন (এমনকি তাদের কাছে বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত না থাকলেও): স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, সমাজ কল্যাণ বিভাগ, মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতীয় কাউন্সিল ইত্যাদি।

৩.    প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন (ডিপিও) কিংবা প্রতিবন্ধিতা এবং/অথবা বয়স সুনির্দিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করার জন্য যোগাযোগ করুন। এই ধরনের সংস্থাগুলোতে সাধারণত সদস্য থাকে এবং সম্ভব হলে তাদের চাহিদা যাচাই করার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

৪.     যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি থাকে তাহলে নিম্নলিখিত উপায়ে প্রাক্কলন বা অনুমান করা যেতে পারে:

    • ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৫% কোন না কোন ধরনের প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত (শারীরিক, ইন্দ্রিয় বা অনুভূতিগত, বুদ্ধিগত এবং মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধিতা)। এবং তাদের মধ্যে ৫০% নারী;
    • প্রায় ১১.৫% প্রবীণ ব্যক্তি (৬০+);
    • প্রতিবন্ধী শিশুদের সংখ্যা যেকোন জনপদের ১৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ ধরে নেওয়া যায়;
    • এমন কিছু মানুষ থাকতে পারেন যাদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয়েছে, যা থেকে পরবর্তীতে প্রতিবন্ধিতা তৈরি হতে পারে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দুর্দশার অভিজ্ঞতা পেতে পারেন এবং তাদের শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

৫.     যেখানে সম্ভব চাহিদা নিরূপণ টিম ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন টিমে প্রতিবন্ধিদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তি/ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন; এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নারী, পুরুষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি/ব্যক্তিদের টিমে অন্তর্ভুক্ত করুন।

৬.    বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং সকল বয়সের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের (শিশু প্রতিবন্ধীদের চাহিদা জানার জন্য তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ) দলীয়ভাবে সাক্ষাতকার নিন। যদি এটা করা সম্ভব না হয়, তাহলে অবশ্যই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন (ডিপিও) এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাতকার নিতে হবে।

৭.     খাতভিত্তিক কর্মসূচির অধীনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট চাহিদা, অগ্রাধিকার ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য নারী ও পুরুষ প্রতিবন্ধীদের সাথে পরামর্শ করা ও তাদেরকে চাহিদা নিরূপণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করা নিশ্চিত করুন। মনে রাখুন যে বুদ্ধি কিংবা মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধিতা জনগণের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যেতে পারে এবং তাদের কথা জানার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করতে হবে।

৮.    লিঙ্গ, বয়স ও প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক পৃথক তথ্য/উপাত্ত সংগ্রহ করুন। তবে এই ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য/উপাত্ত সংগ্রহকালে সবসময় অনুমতি নিয়ে নিন এবং এই ধরনের তথ্য/উপাত্ত কী কাজে ব্যবহার করা হবে তা ব্যাখ্যা করে বলুন।

৯.    পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন এবং সেই অনুযায়ী আপনার কর্মসূচি/কার্যক্রমকে প্রাসঙ্গিকীকরণ করুন: প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বয়স্ক/প্রবীণ মানুষেরা কী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দৃশ্যমান? অন্তর্ভুক্তিকরণ/বাইরে রাখা, জেন্ডার, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক/প্রবীণ প্রমুখদের কী অবস্থা?

১০.  প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ ব্যক্তিদের ব্যবহৃত সেবাগুলো কী পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নিরূপণ করা: সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে কিংবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্যযত্ন নেওয়ার অবস্থা, পুনর্বাসন কেন্দ্র, সামাজিক সেবাকেন্দ্র, সহায়তা সেবার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনসমূহ ইত্যাদি।

১১.   আবাসিক (প্রায়শ বন্ধ থাকে) প্রতিষ্ঠানে বসবাসরত ব্যক্তিরা অবহেলিত কিংবা পরিত্যক্ত যাতে না হয় তা নিশ্চিত করুন, এমনকি সেখানে যদি এখন কোন কর্মী নাও থাকে। মৃগী রোগ, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে অত্যবশ্যকীয় ওষুধের দরকার হয় সেই সকল ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপত্র দেয়ার ব্যবস্থা করুন।

১৩.  ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পানি সংগ্রহের স্থান, খাদ্য বিতরণ স্থান, হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবাকেন্দ্রসমূহের ছবি তুলুন এবং সেখানকার প্রবেশগম্যতার অবস্থা যাচাই করুন।

১৪.   পরিকল্পিত সেবা ও পুর্নবাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চিহ্নিত সম্ভাব্য বাধাগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে পর্যালোচনা করুন এবং আপনার যাচাই ও নিরূপনের ফলাফল জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করছে এমন অন্যান্য অংশীদার বা সংস্থাগুলোর সাথে বিনিময় করুন, যাতে করে তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এমন ধরনের তথ্য বিনিময়কালে সুরক্ষা নীতিমালা মেনে চলুন, বিশেষ করে সংঘাতময় পরিবেশে।

১৫.   দুর্যোগের কারণে কী প্রতিবন্ধিতা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ল? দুর্যোগে সাড়া দেওয়ার সময় পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে সহায়তা প্রয়োজন এমন সবাইকে সেবার আওতাভুক্ত করতে হবে এবং যাদের আরো বেশি বিশেষায়িত সহায়তা দরকার কিংবা মনো-সামাজিক সহায়তা দরকার তাদের জন্য সেই ধরনের চাহিদামাফিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।

কোন ধরনের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি অনুসরণ করে লিঙ্গ, বয়স ও প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত পৃথক তথ্য/উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে (স্পিয়ার হ্যান্ডবুক, ওয়াশিংটন গ্রুপ কোয়েশ্চনস) জানান এবং এটি যেন মানবিক কার্যক্রমের সকল ক্লাস্টারে একটি মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

স্পিয়ার হ্যান্ডবুকে পৃথক পৃথক বয়স গ্রুপের জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য নিম্নলিখিত বয়স গ্রুপকে বিবেচনায় নিয়ে থাকে: ০-৫; ৬-১২; ১৩-১৭; ১৮-৪৯; ৫০-৫৯; ৬০-৬৯; ৭০-৭৯; এবং ৮০+।

Sources
The Sphere Project. The Sphere Handbook. Core Standard 3: Assessment
World Bank and World Health Organisation. The World Report on Disability. 2011
Washington Group on Disability Statistics
Top of page