সংস্থা

জরুরি পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে মূলধারার সংস্থা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের পাশাপাশি বেশ কিছু সংখ্যক বিশেষায়িত সংস্থা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে। এই ধরনের সংস্থাগুলো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুততার সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারে কিংবা তারা প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য মূলধারার সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করে।

জখম, মানসিক আঘাত ও পুনর্বাসন

অনেক বড় আকারের জরুরি পরিস্থিতিতে, জখম ও আঘাত/ভীতি (মানসিক আঘাত ও কষ্ট যার অন্তর্ভুক্ত), এবং প্রয়োজনীয় পুনর্বাসনের কাজগুলো সাধারণত স্বাস্থ্য ক্লাস্টারের অধীনে উপ-ক্লাস্টার হিসেবে ব্যবস্থাপনা করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ যেমন হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল, সিবিএম, হেল্পএজ, লাইট ফর দি ওয়ার্ল্ড, সাইটসেভারস, আইসিআরসি — এমন ধরনের কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাদের পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয় এনজিওগুলোও প্রায়শই কারিগরি ও প্রত্যক্ষ সেবা প্রদান করে থাকে কিংবা তারা তৃণমূলের সংগঠনগুলোর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেয়।

প্রবীণ ও প্রতিবন্ধিতা টাস্ক ফোর্স

সাম্প্রতিক কয়েকটি জরুরি পরিস্থিতির ঘটনায় প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। এই ধরনের টাস্ক ফোর্স সাধারণত প্রটেকশন বা সুরক্ষা ক্লাস্টারের অধীনে কাজ করে। তারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্যদের যেমন প্রবীণ ব্যক্তি, আহত ব্যক্তিদের সহায়তা করার পাশাপাশি জরুরি ত্রাণ সম্পর্কে সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। তাদের কাজের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন সেবা, সহায়ক যন্ত্র/ডিভাইস ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট সেবাসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এছাড়াও এই ধরনের টাস্ক ফোর্সগুলো সাধারণত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিকরণ নিয়ে অ্যাডভোকেসি করে এবং দুর্যোগে ও জরুরি পরিস্থিতিতে থাকা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিস্থিতি ও অবস্থার কথা কর্মরত ক্লাস্টার ও মূলধারার সেবাসমূহে জানাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে

প্রতিবন্ধিতা নিয়ে কাজ করে এমন বিশেষায়িত সংস্থাসমূহ

বড় ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে বিশেষায়িত আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ যাদের প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগকালীন সময়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা সরাসরি কিংবা পরোক্ষাভাবে স্থানীয় অংশীদার সংস্থাগুলোর সাথে মিলে দুর্যোগ মোকাবেলা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাদের এই ধরনের কাজে অনেক বছরের অভিজ্ঞতা থাকায় তাদের মধ্যে বড় ধরনের দক্ষতা অর্জিত হয় যা তারা নিজেদের কার্যক্রমে ব্যবহার করার পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাকে দুর্যোগে অন্তর্ভুক্তিমূলক ধারণার ভিত্তিগুলো (প্রতিবন্ধিতা ও অন্তর্ভুক্তি) কিংবা টুইন ট্রাক অ্যাপ্রোচ/পদ্ধতি) বোঝার পাশাপাশ পরিস্থিতি বুঝতে ও করণীয় নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও তারা একটি নির্দিষ্ট ধরনের পরিস্থিতির সমাধানে করণীয় বাস্তবায়নেও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে। এছাড়াও প্রবেশগম্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য কীভাবে সমাধানগুলো তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ পেতেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। তারা সাধারণত এই ধরনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহায়তা করে কিংবা যেখানে সুনির্দিষ্ট সেবাগুলোর জন্য সহায়তা পাওয়া যাবে সেখানে রেফার করে; যেমন সহায়ক উপকরণ, স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন, কাউন্সেলিং, পরিবহন ইত্যাদি সেবাগুলো যেখান থেকে পাওয়া যাবে সেখানে রেফার করে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন

অনেক দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে নিজেরাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন কিংবা কখনো কখনো আত্ম-সহায়ক-গ্রুপ (যা সাধারণত ডিপিও নামে পরিচিত) তৈরি করে, যাদের সাথে যোগাযোগ করে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা করার বিষয়ে পরামর্শ করা যেতে পারে: "আমাদেরকে ছাড়া আমাদেরকে নিয়ে কিছুই করা যাবে না (নাথিং এবাউট আস, উইথআউট আস)" একটি শ্লোগান যা ৯০ এর দশক থেকে প্রতিবন্ধীদের আন্দোলনে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার মূল কথাটি হলো — এমন কোন নীতি তৈরি করা যাবে না যেখানে যাদের জন্য সেই নীতি তাদের অংশগ্রহণ থাকবে না।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সংগঠনগুলো জাতীয় প্লাটফর্মে বা জোট বা মোর্চায় থাকতে পারে, তবে তাদের সদস্যরা প্রায়শই স্থানীয় পর্যায়ে থাকে। ক্লাস্টার মিটিংগুলোতে এই সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করুন। তবে একথা মনে রাখুন যে মিটিংয়ে যোগদানের জন্য তাদের সহায়তার দরকার হতে পারে, যেমন: পরিবহন বা যাতায়াতের সহায়তা, জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় বা এই কাজের সাথে যুক্ত শব্দমালার সাথে পরিচয় না থাকায় তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার সুবিধার্থে দোভাষীর সহায়তা ও ইশারা ভাষায় বোঝানোসহ আরো অনেক ধরনের সহয়তার দরকার হতে পারে যা তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে যে তাদের কোন ধরনের সহায়তা দরকার।

জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগে নারী প্রতিবন্ধীরা বিশেষত ঝুঁকির মধ্যে থাকে বিধায় নারী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি তাদেরকে নিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করা শুরু করতে হবে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে নারী প্রতিবন্ধীরা জেন্ডার বৈষম্য ও অপবাদের কেন্দ্রে থাকে এবং তাই তারা প্রায়শ নিজেদেরকে প্রান্তিকতা ও ঝুঁকির মধ্যে দেখতে পায়; অর্থাত্‌ তারা প্রান্তিকতা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। প্রতিবন্ধী নারীদের নেটওয়ার্ক ও সংগঠনের সাথে কাজ করার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মূল্যবান ও দরকারি পরিবর্তন আনতে সহায়তা করা সম্ভব হয়। পরিকল্পনা প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন বা চাহিদা নিরূপন, বাস্তবায়ন ও সেবা সরবরাহ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে তারা তাদের প্রয়োজনগুলোকে দুর্যোগে ও জরুরি অবস্থায় কাজে নিয়োজিতদের সামনে আরো ভালোভাবে তুলে ধরতে পারে এবং তারা নিজেদের সামর্থ্য ও ক্ষমতায়নও ঘটাতে পারে।

তাদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করা যাবে?

সংস্থাগুলোর সদর দপ্তরের সাথে কিংবা আপনার দেশে নিবন্ধিত দেশীয় কার্যালয়ের সাথে আগেভাগে যোগাযোগ করুন। দুর্যোগে ও জরুরি পরিস্থিতিতে মানবিক সাহায্য নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো কখনো কখনো জাতিসংঘের কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাদের সাথেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।

Top of page