আশ্রয়কেন্দ্র

একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বা একীভূত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার সময় অবশ্যই সার্বজনীন নকশা নীতিমালা বিবেচনায় রাখতে হবে এবং এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে হবে:

  • আশ্রয়কেন্দ্রের প্রবেশগম্যতাপথ;
  • প্রবেশপথ হতে হবে বাধামুক্ত। যদি দরজা ও প্রবেশপথের মধ্যে উচ্চতার ভিন্নতা থাকে তাহলে অবশ্যই হ্যান্ডরেইলসহ ঢালু পথ তৈরি করতে হবে;
  • দরজা অবশ্যই একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর প্রবেশ করার জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত হতে হবে, এবং দরজার হাতল/হ্যান্ডেল প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহার উপযোগী বা প্রবেশগম্য হতে হবে;
  • গণ-লেট্রিন ও গণ-ওয়াশরুম অবশ্যই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের পরিবার যেখানে বাস করে সেখান থেকে কাছে হতে হবে কিংবা তাদের বসবাসের ঘরের মধ্যে কিংবা ঠিক পাশে নির্মাণ করতে হবে;
  • আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরের জায়গা অবশ্যই হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর হুইলচেয়ার ঘোরানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রশস্ত হতে হবে (১৫০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধ);
  • রান্না করার ব্যবস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হাতের নাগালে থাকতে হবে।

জরুরি অবস্থা মোকাবেলার সময়গুলোতে আশ্রয়কেন্দ্রের নকশা তৈরি, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কীভাবে আশ্রয়কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ও বাইরের পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াবে সেটা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ; যেমন: আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানো থেকে শুরু করে আশ্রয়কেন্দ্রের অভ্যন্তরে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করা, অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়ানো, বিভিন্ন ধরনের সেবাকেন্দ্রে যাওয়া ও সেবা নেওয়া, লেট্রিন ও ওয়াশরুমের যাওয়া এবং বিতরণ কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করার মতো কাজগুলো যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজে করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যাবে তা খুঁজে পেতে নারী ও পুরুষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

এছাড়াও অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন আশ্রয়কেন্দ্রের টপোগ্রাফি, ভূপৃষ্ঠের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং আশ্রয়কেন্দ্রের মাটির গুণাগুণ ইত্যাদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দৈনন্দিন কাজকর্মে অংশ নিতে পারবে নাকি তারা আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবে তা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

প্রথম ছবিতে একটি আশ্রয়কেন্দ্র দেখান হয়েছে যেখানে অনেক বাধা রয়েছে। নিচে আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রের ছবি, যেখানে কোন ধরনের বাধা নেই কিংবা জায়গাটা বাধামুক্ত করা হয়েছে। ছবিতে লেখা রয়েছে: "আশ্রয়কেন্দ্র এবং এর চারপাশের পরিবেশ হলো প্রবেশগম্য কমিউনিটি তৈরির প্রথম পদক্ষেপ এবং আশ্রয়কেন্দ্রের নকশাই বলে দেবে যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাধীনভাবে ও অবাধে চলাফেরা করতে পারবে কিনা।"
© AUOR 2015

আশ্রয় কর্মসূচিতে নমনীয়তা থাকা আবশ্যক। যাতে, প্রয়োজনে কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট চাহিদা মোতাবেক পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা সম্ভব হয়। আশ্রয় কর্মসূচিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার এবং তাদের সাথে পরামর্শ করার দরকার রয়েছে। আশ্রয় কর্মসূচির পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেন্ডার বিষয়টিকে সমন্বিত করা নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে সঙ্কটকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত সকলেই নিরাপদ আশ্রয় কর্মসূচির সুফল পায়।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং/ অথবা তাদের পরিবারকে অবশ্যই আশ্রয়কেন্দ্রের এমন স্থানে থাকার জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে যেখান থেকে গণ-লেট্রিন এবং ওয়াশরুম, স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং অন্যান্য কমিউনিটি/সামাজিক কেন্দ্রগুলো এবং বিতরণ কেন্দ্র কাছাকাছি। তবে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তাদেরকে যেন তাদের কমিউনিটি এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা না হয়।

নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে করে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার প্রয়োজনে লেট্রিন ও ওয়াশরুমে আলোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দরজায় প্রবেশগম্য তালা লাগাতে হবে এবং নিরাপত্তা কর্মীদের জেন্ডার ও প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতন ও সংবেদনশীল করতে হবে।

    একটি অগোছালো আশ্রয়কেন্দ্র যেখানে কোন তথ্যই সঠিকভাবে চিহ্নিত করা নেই। এই ছবির নিচে আরেকটি ছবিতে আশ্রয়কেন্দ্রটি সুবিন্যস্তভাবে দেখানো হয়েছে। যেখানে ছবিতে লেখা রয়েছে: "দুর্যোগকালে সেবা ও তথ্যে সীমিত প্রবেশগম্যতা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে।"
    © AUOR 2015
    Sources
    IFRC, CBM and Handicap International. All Under One Roof. Disability-inclusive shelter and settlements in emergencies. IFRC. 2015.
    Handicap International. Guidelines for Creating Barrier-Free Emergency Shelters. Handicap international Nepal Programme. 2009.
    OCHA. IASC Gender Handbook in Humanitarian Action - Gender and shelter in emergencies.2006
    Top of page