শৌচাগার

একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তি ভারী প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা শৌচাগারে প্রবেশ করছেন। শৌচাগারে প্রবেশের জন্য একটি ঢালু পথ তৈরি করা হয়েছে এবং দরজা দড়ি দিয়ে টেনে এনে আটকানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
© Handicap International

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে শৌচাগার বা লেট্রিন তৈরি করতে হবে। এগুলো এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে এবং জায়গাটা নিরাপদ। তাহলে শৌচাগারগুলো নারী ও শিশুদের পক্ষে ব্যবহার করা সহজ ও নিরাপদ হবে। নারীদের জন্য অবশ্যই আলাদা শৌচাগার থাকতে হবে। জরুরি পরিস্থিতিতে স্বল্পমেয়াদের জন্য যদি আবাসস্থল থেকে দূরে শৌচাগার তৈরি করতে হয় তাহলে সেগুলো যেন আশ্রয় শিবির বা তাঁবু থেকে কোনমতেই ৫০ মিটারের চেয়ে বেশি দূরে না হয়। তবে আদর্শ অবস্থানটি হলো ব্যক্তি বসবাস এলাকা থেকে শৌচাগারের দূরত্ব ৩০ মিটার হবে।

শৌচাগার সকলের জন্য সহজলভ্য ও প্রবেশগম্য নিশ্চিত করতে নিচের কাজগুলো করা যেতে পারে:

  • গড়ে ১ থেকে ১০টি শৌচাগার প্রবেশগম্য করা উচিত্‌। শৌচাগারগুলো সার্বজনীন নকশা নীতিমালা মেনে নির্মাণ করতে হবে এবং বাকি শৌচাগারগুলোও যতোটা সম্ভব প্রবেশগম্যভাবে তৈরি করতে হবে;
  • প্রবেশগম্য সকল স্থান বড় আকারের প্রবেশগম্যতার চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে এবং পথ নির্দেশনা থাকতে হবে;
  • সকল ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা শনাক্ত করে সেগুলোও চিহ্নিত করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় বেড়া দিয়ে/দেয়াল তুলে অন্যান্য এলাকাগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে;
  • যেখানে যেমনটা দরকার এমন উপযুক্ত ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমগুলো (বড় আকারের মুদ্রিত সামগ্রী, লাউডস্পিকার ব্যবহার করা, সাধারণ ও সহজ ভাষা ব্যবহার, ছবি ও ডায়াগ্রাম এঁকে দেখানো) ব্যবহার করে সকল ধরনের তথ্য প্রচার করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি প্রবেশগম্য লেট্রিনের নকশা ও মাপ কী হবে সেটা এই ছবিতে দেখানো হয়েছে।একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী স্বাধীনভাবে এই লেট্রিন ব্যবহার করতে পারবেন।
© CBM 2015

কীভাবে জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য প্রবেশগম্য মোবাইল বা স্থানান্তরযোগ্য ল্যাট্রিন তৈরি করা যায়

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রাথমিক পর্যায়ে জরুরিভাবে ব্যবহারের জন্য স্থানান্তরযোগ্য বা মোবাইল লেট্রিন তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে কমপক্ষে ১২০ সেন্টিমিটার বাই ১২০ সেন্টিমিটার জায়গা থাকা দরকার। তবে আদর্শ হলো ১৮০ সেন্টিমিটারx১৮০ সেন্টিমিটার জায়গা থাকা। এই ধরনের লেট্রিনের দরজা অবশ্যই ৯০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত হতে হবে এবং এর দরজা বাইরের দিকে খুলবে এবং তাতে একটি বড় আকারের হাতল বা হ্যান্ডেল থাকবে কিন্তু সেটা গোলকার হবে না। এছাড়াও দরজার সাথে একটা রশি বা দড়ি লাগানো থাকবে যাতে করে রশি ধরে টেনে দরজা বন্ধ করা যায়। দরজায় তালা দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখানে তালা মানে ছিটকানি বা এমন কিছু। তবে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যে তালা দেওয়ার যে ব্যবস্থাই করা হোক না কেন সেটা যেন তালা ধরতে সমস্যা হয় এমন ব্যক্তিরাও সহজে ব্যবহার করতে পারে। এ লক্ষ্যে স্লাইডিং কিংবা ঘুরিয়ে খোলা যায় এমন তালা কিংবা ছিটকানি বা কাঠের বোল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেট্রিনের মধ্যে ৮০ সেন্টিমিটার বাই ১৩০ সেন্টিমিটারের একটা খোলা জায়গা থাকতে হবে যাতে করে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী তার হুইলচেয়ার থেকে টয়লেটের সিটে বসতে ও আবার হুইলচেয়ারে ফিরে আসতে পারে। কাজটা তিনি নিজে নিজে করতে পারেন কিংবা সহায়তাকারীর সাহায্য নিয়ে করতে পারেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে লেট্রিনের মধ্যে ১৫০ সেন্টিমিটার বাই ১৫০ সেমি জায়গা দেয়া ভাল। তাহলে হুইলচেয়ারটা সম্পূর্ণভাবে সেখানে ঘোরানো সম্ভব হবে।

এছাড়াও হাতে ধরার রেলিং বা হ্যান্ডরেইল স্থাপন করতে হবে, যাতে করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সেই হাতল ধরে নিজেকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজটি করতে পারে। এই হাতল এসএস পাইপ বা রড দিয়ে তৈরি করা ভালো। তবে এসএস পাইপ বা রড পাওয়া না গেলে শক্ত প্লাস্টিকের টিউব দিয়েও তৈরি করা যেতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এটি শরীরের ভার ধরে রাখতে পারবে। এটি ভূমি থেকে ৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় বসাতে হবে।

টয়লেটের বসার সিট কিংবা কী ধরনের লেট্রিন তৈরি করা হবে সেটা ওই এলাকার মানুষের অভ্যাস ও রীতিনীতির সাথে মিলিয়ে তৈরি করতে হবে। তবে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যারা এই টয়লেট ব্যবহার করবেন তাদের সাথে পরামর্শ করতে হবে এবং সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বাইরে র‍্যাম্প এবং ভেতরে হাত দিয়ে ধরার হাতলসহ একটি লেট্রিনের নকশার ছবি দেখানো হয়েছে।
© WEDC 2011
Sources
CBM. Inclusive post-disaster reconstruction: Building back safe and accessible for all. 2015.
Handicap International. Accessibility in emergency. Technical sheets WASH infrastructure Pakistan, 2010.
WEDC. Inclusive design of school latrines - how much does it cost and who benefits?. Briefing note 1. Water, Engineering and Development Centre. Loughborough University. 2011
World Bank. Including Persons with Disabilities in Water Sector Operations. A Guidance Note. Washington. 2017.
Top of page